
বেলাল আজাদ::
কক্সবাজার জেলায় পিতামাতার ভরণ পোষণ আইনে দায়েরকৃত একমাত্র মামলার বাদী ৮১ বছরের অসহায় ও অসুস্থ্য বৃদ্ধা মাহমুদা খাতুন মামলা দায়ের করার দীর্ঘ ৬ মাসেও কোন ভরণপোষণ অথবা একমাত্র ছেলে ও ২ নাতীর অত্যাচার থেকে রেহাই পায়নি। বৃদ্ধার একমাত্র ছেলে সন্ত্রাসী সিরাজ মিয়া ও তারই ২ সন্ত্রাসী ছেলে আব্দুল খালেক ও মাহমুদুল হক মামলা দায়েরের জের ধরে অসহায় মাহমুদা খাতুন কে প্রতিনিয়ত গালিগালাজ, হাঁকাবকা, টানাহেঁচড়া, মারধর, ঘরের ঘেরাবেড়া ও আসবাবপত্র ভাংচুর-লুটপাট এবং ঘরে মলমূল ছিঁটিয়ে দেয়ার মত নির্মম ও নজির বিহীনঅত্যাচারে অতিষ্ট করে তুলেছে। নির্যাতিত বৃদ্ধা তার সন্ত্রাসী ছেলে ও নাতীদের অত্যাচার থেকে বাচাঁর ও বিচারের আকুতি নিয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়া বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব পার্শ্বের বাসিন্দা দরিদ্র মৃত আব্দুর রহমানের স্ত্রী বৃদ্ধা মাহমুদা খাতুন (৮১) কে অথবা তার প্রয়াত স্বামী আব্দুর রহমান কে তাদের একমাত্র ছেলে সিরাজ মিয়া (৪৩) এবং ২ নাতী আব্দুল খালেক (২২) ও মাহমুদুল হক (২০) কখনো কোন সাহায্য-সহযোগীতা করেনি এবং চিকিৎসা সেবা অথবা ভরণপোষণ দেয়নি। গত ৩ বছর পূর্বে আব্দুর রহমান মারা গেলে একমাত্র ছেলে ও ২ নাতী বৃদ্ধা মাহমুদা খাতুন কোন স্বামীর রেখে যাওয়া দীর্ঘ প্রায় অর্ধ শত বছরের পূরনো বন বিভাগের পাহাড়ী জমিতে থাকা বসতভিটা থেকে তাড়িয়ে দিতে নানা ভাবে অত্যাচার শুরু করে। অসহায় বৃদ্ধা মাহমুদা খাতুনকে তার ছেলের ও ২ নাতীর মারধরসহ অত্যাচার করার এবং ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় বহুবার সালিশ- বিচার হলেও কার্যতঃ কোন প্রতিকার মেলেনি। বৃদ্ধা মাহমুদা তার ছেলে ও নাতীদের অত্যাচারে অতিষ্ট ও বাধ্য হয়ে বহুবার ঘর ছেড়ে এলাকার মানুষের বাড়ী ও কন্যাদের ঘরে আশ্রয়ে ছিল। সর্বশেষ গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য় (উখিয়া) আদালতে পিতামাতার ভরণপোষণ আইনসহ দন্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় মামলা (সি.আর-২৬৬/২০১৬) দায়ের করিলে, আদালতের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট জনাব সুশমত চাকমা মামলাটি তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দেয়ার জন্য উখিয়া থানার ওসি কে নির্দেশ দেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা উখিয়া থানার এস.আই. আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করিলে, গত ১৪ মার্চ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব সিরাজ উদ্দীন পিতামাতার ভরণপোষণ আইনে আসামীদের প্রতি সমন জারীর নির্দেশ দেন। ২০১৩ ইং সনে পাশ হওয়া পিতামাতার ভরণপোষণ আইনে এ পর্যন্ত সারা দায়েরকৃত মাত্র ১১টি মামলার ১০ম ও কক্সবাজার জেলায় প্রথম মামলাটির বাদী মাহমুদা খাতুন মামলা দায়েরের দীর্ঘ ৬ মাসাধিকাল পরেও কোন ভরণপোষণ অথবা প্রতিকার পাওয়া দূরে থাক উল্টো ছেলে ও নাতীদের অত্যাচার বেড়েই চলেছে। প্রায় অচল, অসুস্থ্য, অসহায় ও ৮১ বছরের বৃদ্ধা মাহমুদা খাতুন কে তার একমাত্র ছেলে সিরাজ মিয়া এবং ২ নাতী আব্দুল খালেক ও মাহমুদুল হক কর্তৃক প্রায় সময় গালিগালাজ, হাঁকাবকা, মারধর, ঘরে মলমূত্র ছিঁটানো. যাদুটোনা করা, ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর-লুটপাট এবং ঘর থেকে টেনে হিছড়ে বের করে দেয়ার চেষ্টা সহ নানা ভাবে অত্যাচারের মাত্রা বেড়েই চলেছে। শেষ বয়সে সাহায্য-সহানুভুতির বদলে নিজের ছেলের ও নাতীদের অত্যাচারে অতিষ্ট অসহায় বৃদ্ধা মাহমুদা খাতুন ন্যায় বিচার ও প্রতিকার চেয়ে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ঘুরে কেঁদে মরলেও কার্যতঃ কোন প্রতিকার বা ন্যায় বিচার পাচ্ছেন না। ছেলের হাতে নির্যাতিন মা মাহমুদা খাতুন ২৪ মার্চ দুপুরে এই প্রতিবেদকের কাছে কেঁদে কেঁদে তার একমাত্র ছেলে ও ২ নাতীর দ্বারা নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করে প্রশাসনের কাছে শাস্তি ও প্রতিকার কামনা করেন। বৃদ্ধা মাহমুদা খাতুন জানান, তার একমাত্র ছেলে সন্তান সিরাজ মিয়া তার বাবার জীবদ্দশা থেকে এই পর্যন্ত পিতামাতাকে দেখাশোনা করা দুরে থাক, বাবা বা মা বলেও ডাকেনি কখনো। স্থানীয় জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী ছেলের দ্বারা মা অত্যারিত হওয়ার ঘটনার কিছুই জানেন না বলে জানালেও স্থানীয় ইউপি মেম্বার রফিক আহমদ, সাবেক মেম্বার আবু তাহের ও প্রতিবেশী আব্দুস ছালাম, ইব্রাহীম সহ অনেকেই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল খায়ের জানান, বৃদ্ধার দায়েরকৃত পিতামাতার ভরণপোষণ আইনের মামলায় বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা মত তদন্ত শেষে সত্যতা পাওয়ায় প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তবে বৃদ্ধাকে ছেলে ও নাতীরা নির্যাতন বা মারধরের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ দিলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, যে বয়সে অসহায়,অচল, অসুস্থ্য ও বৃদ্ধা মায়ের ভরণপোষণ-চিকিৎস সেবা দেওয়াসহ দেখাশোনা করার কথা, সে বয়সে যদি নিজের পেটের ছেলের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে? অনেকে এ ঘটনা অন্ধঁকার যুগের বর্বতারতাকে হার মানিয়েছে বলে মত ব্যক্ত করেছেন। স্বামীর রেখে যাওয়া বনবিভাগের জমিতে থাকা বসতভিটা থেকে তাড়াতেই নিজের বৃদ্ধা মায়ের সাথে এমন নিষ্টুরতা বলে জানালেন অনেকে। নিজের সন্তাসী ছেলে ও ২ নাতীর হাতে নির্যাতিন বৃদ্ধা মাহমুদা খাতুনের মত সাধারণ মানুষও বৃদ্ধাকে নির্যাতনকারী ছেলে সিরাজ মিয়া ও ২ নাতীকে আইনের
আওতায় এনে উচিত শাস্তি দিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানান॥
পাঠকের মতামত